বর্তমান যুগটা অনেক বেশি স্ট্রেসফুল। আমরা আমাদের নিজেদেরকে সময় দেই না। আমরা আমাদের পরিবারকে সময় দেই না এবং আমাদের বন্ধুবান্ধবদের সময় দেই না। যার কারণে আমরা অনেকটা অসামাজিক হয়ে পড়ছি। যেহেতু আমরা নিজেদেরকে সময় দিতে পারি না এবং পরিবারকে সময় দিতে পারি না সে কারণে আমরা অনেকেই হৃদপিণ্ড বা হার্টের সমস্যায় ভোগছি এবং আমাদের আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ার পূর্বেই আমরা বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে ভোগছি। প্রতিদিন আমরা একটা পেইনফুল লাইফ ক্রিয়েট করছি। আজকে আমি আপনাদেরকে হার্ট বা হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখার জন্য ১০ টি উপায় বলবো। এই ১০টি উপায় আপনারা অনুসরণ করলে হৃদয়কে তথা হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে পারবেন।
হৃৎপিন্ড সুস্থ রাখার সহজ উপায় |
বর্তমান সময়ে আমরা চেষ্টা করি কে কার আগে থাকবো। আমি বা আপনি আমরা চিন্তা করি আমি আমার বন্ধুর আগে থাকবো। কীভাবে আমি ওর থেকে বেশি টাকা ইনকাম করব? কীভাবে আমি ওর থেকে ভালো লাইফ স্টাইল যাপন করব? কীভাবে ওর থেকে বেশি সফলতা অর্জন করব? এগুলো ভাবতে গিয়ে আমরা আমাদের নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলছি। এই স্ট্রেসফুল জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের অকাল মৃত্যুকে বরণ করছি। আমরা সবাই অজানা এক দৌড় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এই দৌড় প্রতিযোগিতায় আমরা কখন যে হোঁচট খেয়ে পড়ে নিজেদের ক্ষতি করছি আমরা তার টেরই পাই না। আজকে আমি আপনাদেরকে হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখার জন্য ১০টি সহজ উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত এই আর্টিকেলে লিখলাম-
১. পর্যাপ্ত ঘুম
প্রথমত পর্যাপ্ত ঘুম অবশ্যই আমাদের সারাদিন কাজকর্ম শেষ করার পর একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো প্রয়োজন।আর সেটি হলো সাত থেকে আট ঘন্টা একটানা ঘুম হলে ভালো হয় অথবা বিভিন্ন স্লটে ও করা যেতে পারে। ঘুম সৃষ্টিকর্তার এক অসাধারণ নিয়ামত। অনেকেই আছেন অনেক ধন সম্পদের মালিক, অনেক কোটিপতি কিন্তু সৃষ্টিকর্তা তাকে এই নিয়ামত দেননি। ঘুম অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার এক অনন্য নিয়ামত। যখনই আমাদের ঘুম পাবে তখনই আমাদের ঘুমাতে হবে। ঘুমানোর মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে বিভিন্ন পজেটিভ চিন্তাভাবনা নিঃসরণ হয়ে যায়। ঘুম বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেসফুল হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
২. অতিরিক্ত ওজন
প্রত্যেকেরই হাইট অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট ওজন আছে। আমরা তার বিএমআই (BMI) অর্থাৎ "Body Mass Index" এর মাধ্যমে তা নির্ণয় করতে পারি।যদি আমরা আমাদের ওজনকে মিটারে নিয়ে স্কয়ার দিয়ে ভাগ করি তাহলে আমরা আমাদের বিএমআই পাব। আমাদের বিএমআই যদি ১৮ থেকে ২৫.৫ পর্যন্ত থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে এটা আমাদের স্বাভাবিক ওজন। আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে স্বাভাবিক ওজনের মধ্যে থাকার।
৩. ফিজিক্যাল এক্টিভিটি
আমাদেরকে সবসময় ফিজিক্যাল একটিভ থাকতে হবে।আমাদেরকে সব সময় কোনো না কোনো কাজের মধ্যে থাকতে হবে। হোক না সেটা ছোট কাজ বা হোক না সেটা বড় কাজ। আমাদের এনার্জি এক্সপেন্ডিচার করতে হবে অর্থাৎ আমরা আমাদের সারাদিন খাবার-দাবারের মাধ্যমে যে এনার্জি গ্রহণ করছি তা খরচ করতে হবে। যদি আমরা দাঁড়িয়ে থাকি তাহলে আমাদের এনার্জি লস হয়। যদি কথা বলি সেখানে আমাদের এনার্জি লস হয়। আমরা যদি একটা মানুষের সাথে কোথাও ঘুরতে যাই তাহলে সেখানেও আমাদের এনার্জি লস হয়। অর্থাৎ, একটা ফিজিক্যাল এক্টিভিটি হয়। ফিজিক্যাল এক্টিভিটির মধ্যে কিছু আছে অ্যারোবিক এক্সারসাইজ এবং কিছু আছে অ্যানারোবিক এক্সারসাইজ। তবে জোরে হাঁটা বা সাঁতার কাঁটা বা সাইকেল চালানো হলো উত্তম ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি। আমাদের চেষ্টা করতে হবে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা।
৪. ডায়েট
ডায়েট অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আমরা বর্তমানে এমন একটি সমাজে বসবাস করছি এবং আমরা আমাদের চারপাশের যেসব খাবার খাই সেগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই ভেজাল থাকে। তাই আমাদের খাবারটাকে রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। রুটিনটাকে অনুসরণ করে সকালে রাতে এবং দুপুরে খেতে হবে। একটি প্রবাদ আছে, "সকালে খাও রাজার মতো, দুপুরে খাও প্রজার মতো এবং রাতে খাও ভিখারির মত"। অর্থাৎ,আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাই সেগুলো একটি রুটিন এর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। আর রাতে অবশ্যই খাবার খেয়ে সাথে সাথে ঘুমানো যাবে না।
৫. ধূমপান ত্যাগ
আপনি যদি ধূমপান করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। ধূমপান ত্যাগ করার জন্য এখন বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস এবং ওষুধ চলে এসেছে। ধূমপান ত্যাগ করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ফাংশনাল এ্যাকটিভিটি এবং সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারবো।
৬. সানলাইট
সানলাইট বা সূর্যের আলো হচ্ছে মহান আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত। সকাল বেলার মিষ্টি রোদে আমরা যদি আমাদের এই স্কিনকে এক্সপোজার করি ১৫ থেকে ২০ মিনিট তাহলে আমাদের শরীরে একটি ভিটামিন জমা হয়।আর ভিটামিনটি হলো ভিটামিন ডি। ভিটামিন ডি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রোধ করে আমাদের হাড়,দাঁত এগুলোকে মজবুত করে এবং মনের বিষন্নতা কাঁটাতে সাহায্য করে। আপনি একটি জিনিস খেয়াল করে দেখবেন যেকোনো কারণে যদি সূর্য কয়েকদিন না উঠে তাহলে আমাদের মনটা অনেক বিষন্ন থাকে। এরকমটা হয় কারণ ভিটামিন ডি এর অভাব।
৭. ট্রাভেল
ব্যস্ততার এই সময়ে আমরা আমাদেরকে এবং আমাদের পরিবারকে সময় দিতে পারি না। কিন্তু বছরে দুই বার অথবা তিনবার আমাদের ট্যুরে যাওয়া উচিত। নিজের পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্য আমরা যদি প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাই তাহলে প্রকৃতির সকল এনার্জি বাতাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করবে এবং তখন ভেতর থেকে সকল নেগেটিভিটি দূর হয়ে যাবে।
৮. ফ্যামিলি টাইম
অবশ্যই আমাদেরকে নিজের ফ্যামিলিকে সময় দিতে হবে। পরিবারের সাথে সময় কাটালে আমাদের টেনশন কমে যায় প্রোডাক্টিভিটি বেশি বেড়ে যায়। আমাদের এনার্জি বেড়ে যায় এবং আমাদের মনটা ফ্রেশ হয়ে যায়। যদি আমরা প্রতিদিন আমাদের ফ্যামিলির সাথে সময় কাঁটাতে পারি তাহলে আমাদের ভেতরের পজেটিভিটি বেড়ে যায়। তখন ভেতর থেকে রিফ্রেসমেন্ট অনুভব হয়।
৯. লিসেনিং টু সাম মিউজিক
আমরা যখন একা একা বসে থাকি বা যে জ্যামে গাড়ির মধ্যে আটকা পড়ে থাকি তখন আমরা হেডফোন দিয়ে একটা সফট মিউজিক শুনতে পারি। অথবা যারা মুসলিম আছেন তারা পবিত্র আল-কোরআন থেকে সূরা তিলাওয়াত শোনতে পারেন। এই মিউজিক গুলো আমাদের পজেটিভ হরমোন গুলো রিলিজ করতে সাহায্য করে এবং এই মিউজিক গুলো আমাদের হৃদয়ের মধ্যে একটি প্রশান্তি দান করে যার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রডাক্টিভিটি অফ লাইফ বানাতে পারবো।
১০. কন্ট্রোল অপরিসফেক্টর
আমাদের শরীরের মধ্যে যে বিভিন্ন প্রাইমারি ডিজিজ গুলো বাসা বেধেছে যেমন ধরুন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, চর্বির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, কিডনির সমস্যা, কার্ডিওলার ডিজিজ, বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এই ফেক্টর গুলোকে আমরা যদি কন্ট্রোল করতে পারি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাহলে আমরা আমাদের পজিটিভ এনার্জিগুলো বাড়াতে পারবো এবং আমরা আমাদের হৃদয়কে হ্যাপি রাখতে পারব।